বুধবার, ০৮ মে ২০২৪, ০২:৪৩ অপরাহ্ন

একদিনে ১০৮০ কোটি ডলারের সম্পদ হারালেন গৌতম আদানি

একদিনে ১০৮০ কোটি ডলারের সম্পদ হারালেন গৌতম আদানি

স্বদেশ ডেস্ক:

বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ ধনী গৌতম আদানির মালিকানাধীন আদানি গ্রুপের সাতটি তালিকাভুক্ত কোম্পানির শেয়ারদর ৫ শতাংশের বেশি কমে যাওয়ায় একদিনে ১০৮০ কোটি ডলারের সম্পদ হারালেন ভারতের শীর্ষ ধনী গৌতম আদানি।

বুধবার (২৫ জানুয়ারি) এক দিনেই গ্রুপটির বাজার মূলধন ১০ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলার বা এক হাজার ৮০ কোটি ডলার কমেছে। এর আগে মঙ্গলবার গবেষণা প্রতিষ্ঠান হিনডেনবার্গ রিসার্চ আদানি গ্রুপ নিয়ে এক প্রতিবেদন প্রকাশ করে।

কমে যাওয়ায় শেয়ার
আদানি গ্রিন এনার্জি: ২.৩৪% (১,৮৭২ টাকা)
আদানি ট্রান্সমিশন: ৮.০৮% (২,৫৩৯ টাকা)
আদানি পাওয়ার: ৪.৯৫% (২৬১.০৫ টাকা)
আদানি পোর্টস অ্যান্ড স্পেশাল ইকোনমিক জোন: ৬.১৩% (৭১৪.৫৫ টাকা)
আদানি এন্টারপ্রাইজেস: ১.০৭% (৩,৪০৫ টাকা)
আদানি উইলমার: ৪.৯৯% (৫৪৪.০৫ টাকা)
আদানি টোটাল গ্যাস: ৩.৯০% (৩,৭৪০ টাকা)

হিনডেনবার্গের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আদানি গ্রুপ স্টক ও হিসাবের বিষয়ে জালিয়াতি করেছে। তাদের ভাষ্য, আদানি গ্রুপ ভুল তথ্য দিয়ে বাজারকে প্রভাবিত করেছে। এর মাধ্যমে তারা বাজারে নিজেদের শেয়ারের দাম বাড়িয়েছে।

হিনডেনবার্গের অবশ্য প্রতিবেদনে বলেছে, আদানির বর্তমানে মোট সাতটি সংস্থা শেয়ার বাজারে তালিকাভুক্ত রয়েছে। এগুলো অত্যন্ত চড়া ভ্যালুয়েশনের কারণে সংস্থাগুলির শেয়ারে প্রায় ৮৫ ভাগ নেতিবাচক প্রবণতা রয়েছে। এই অতিরিক্ত ভ্যালুয়েশনের শেয়ারকেই সিকিউরিটি হিসাবে বন্ধক ধরে ঋণ নেয়া হয়েছে। ফলে সম্পূর্ণ সংস্থাই বর্তমানে আর্থিকভাবে একটি স্পর্শকাতর পর্যায়ে রয়েছে। তারা আরো বলেছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বন্ড ও অন্যান্য দেশের ডেরিভেটিভ ব্যবহার করে অর্থ পাচার করা হচ্ছে।

গত বছর, ২০২২ সালে আদানি এন্টারপ্রাইজেসের শেয়ার প্রায় ১২৫ শতাংশ বেড়েছে। এর ফলে বিশ্বের তৃতীয় ধনীতম ব্যক্তির আসনে চলে আসেন গৌতম আদানি। গ্রুপের অন্য সংস্থাগুলির শেয়ারো প্রায় ১০০ ভাগ বেড়েছে।

এদিকে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে ঋণও। তাদের মোট ঋণের পরিমাণ ২৪ বিলিয়ন বা ২ হাজার ৪০০ কোটি ডলার। এটা গ্রুপটির প্রাক্-সমন্বিত আয়ের সাত গুণ। গত বছর সেপ্টেম্বরে এই বিপুল ঋণের অঙ্ক নিয়ে চিন্তা প্রকাশ করে বিশ্লেষক সংস্থা CreditSights ।

ফাইন্যান্সিয়াল টাইমস বলেছে, গবেষণা প্রতিষ্ঠানটির প্রতিবেদনে অভিযোগ করা হয়েছে যে এক দশক ধরে আদানি গ্রুপ এই জালিয়াতি করে আসছে। হিনডেনবার্গ এই অভিযোগসংক্রান্ত মোট ৮৮টি প্রশ্ন উত্থাপন করেছে। তারা আশা করছে, আদানি গ্রুপ এসব প্রশ্নের উত্তর দেবে।

আদানি গ্রুপ হিনডেনবার্গের এই প্রতিবেদনে বড় ধাক্কা খেয়েছে বলে জানিয়েছেন গ্রুপের প্রধান আর্থিক কর্মকর্তা জোগেসিন্দর সিং। এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘আমরা বিস্মিত হয়েছি, গতকাল মঙ্গলবার তারা এই প্রতিবেদন প্রকাশ করল, কিন্তু আমাদের সাথে কথা বলল না। এমনকি যে তথ্য তারা প্রকাশ করেছে, তা যাচাই-বাছাইও করল না। এসব অভিযোগ ভিত্তিহীন।’

জোগেসিন্দর সিং আরো বলেন, এমন সময়ে এই প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে, যা দেখে বোঝা যায়, এর উদ্দেশ্য কী। কিছুদিনের মধ্যেই আদানি গ্রুপের আরেকটি কোম্পানির নতুন শেয়ার বাজারে আসার কথা। এ সময় প্রতিবেদন প্রকাশ করে কোম্পানির সেই প্রক্রিয়া ব্যাহত করার অপচেষ্টা করছে হিনডেনবার্গ।

তবে গৌতম আদানি মনে করেন, তার কোম্পানির স্টকের মূল্যায়ন ঠিক আছে। এর আগেও আদানি কোম্পানি বারবার ঋণের বোঝায় ডুবে যাওয়ার সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়েছে। সম্প্রতি এক টিভি শো-তে গৌতম আদানি বলেন, ‘আমাদের ঋণ পরিশোধের ইতিহাস যদি দেখেন, কোথাও খারাপ রিপোর্ট দেখবেন না। নিয়মিত ঋণের টাকা শোধ করতে বদ্ধপরিকর আমরা।’

আদানি এন্টারপ্রাইজ এফপিওর মাধ্যমে আগামী কয়েক দিনের মধ্যে বাজার থেকে ২৫০ কোটি ডলার তোলার পরিকল্পনা করছিল। এফপিও হলো এমন একটি প্রক্রিয়া, যার মাধ্যমে তালিকাভুক্ত একটি কোম্পানি বাজারে অতিরিক্ত শেয়ার ছেড়ে অর্থ তোলে।

উল্লেখ্য, আদানি এন্টারপ্রাইজ ও গ্রুপটির অন্যান্য তালিকাভুক্ত কোম্পানিতে মরিশাসের একাধিক বিনিয়োগ তহবিলের বিনিয়োগ নিয়ে ভারতের বিভিন্ন নিয়ন্ত্রক সংস্থা আগেও প্রশ্ন তুলেছে।

এ প্রসঙ্গে গৌতম আদানি গত ডিসেম্বরে ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসকে বলেন, ‘অনেক বিশ্লেষক প্রকৃতপক্ষে আমার ব্যবসার ধারা বুঝতে পারেননি। তবে আমার ঋণদাতারা, ব্যাংক ও বৈশ্বিক বিনিয়োগকারীরা তা বোঝেন। আদানি যখনই শেয়ারবাজারে আসে, তখনই তারা আগ্রহ নিয়ে বিনিয়োগ করেন। সে কারণেই আমাদের এত প্রবৃদ্ধি হচ্ছে।’
আদানির বাড়বাড়ন্ত

ফর্বসের তালিকায় গৌতম আদানি বিশ্বের তৃতীয় শীর্ষ ধনী। তবে ব্লুমবার্গের তালিকায় তার অবস্থান চতুর্থ। ব্লুমবার্গ বিলিয়নেয়ার ইনডেক্সের তথ্যানুসারে, বুধবার বিকেল ৫টায় তার সম্পদের পরিমাণ ১১৯ বিলিয়ন বা ১১ হাজার ৯০০ কোটি ডলার। ১৯৮০-এর দশকে ব্যবসা শুরু করা গৌতম আদানির মালিকানায় আছে সমুদ্রবন্দর, বিমানবন্দর, বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী কোম্পানি। সেই সাথে আছে কয়লা আমদানির অনুমোদন। আদানির নিয়ন্ত্রিত প্রতিষ্ঠানগুলো ভারতের চাহিদার এক-তৃতীয়াংশের বেশি কয়লা আমদানি করে।

ভারতের বিদ্যুৎ সঞ্চালনের ২২ শতাংশ হয় তাদের প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে। এই বিদ্যুতের বেশির ভাগই উৎপাদন করা হয় কয়লা থেকে। আদানির গুদামজাতকরণ (ওয়্যারহাউস) ব্যবসাও দিন দিন বড় হচ্ছে।

ভারতের ৩০ শতাংশ খাদ্যশস্য এসব গুদামে মজুত করা হয়। ২০১৯ সালে সাতটি বিমানবন্দর কিনে নেয় আদানি গ্রুপ। এই বিমানবন্দরগুলো দিয়ে ভারতের বিমানযাত্রীদের এক-চতুর্থাংশ যাতায়াত করেন। এ ছাড়া দেশটিতে আকাশপথে পরিবহন করা পণ্যের এক-তৃতীয়াংশই আনা-নেওয়া করা হয় আদানির মালিকানায় থাকা বিমানবন্দরগুলো দিয়ে।

ভারতের মুম্বাই শহরের নাবি মুম্বাই এলাকায় বিশাল একটি খালি জমি রয়েছে। দুই বছরের মধ্যে সেখানে শহরটির দ্বিতীয় বিমানবন্দর নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে আদানি গ্রুপের।

বাংলাদেশ বিদ্যুৎ কিনছে
আদানির কাছ থেকে দিনে এক হাজার ৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেনার জন্য চুক্তি করেছে বাংলাদেশ। ২০১৫ সালে এই চুক্তি হয়েছে। তবে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক গোষ্ঠীর অভিযোগ, বাংলাদেশ তুলনামূলকভাবে বেশি দরে এই বিদ্যুৎ কিনছে। গত ডিসেম্বর মাসে বিদ্যুৎ আসার কথা ছিল। কিন্তু এখনো তা আসা শুরু হয়নি। জানা গেছে, আগামী মার্চ মাসে ৮০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আসতে পারে।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877